মহানবী (সা.) যখন ক্ষুধার্ত হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন

মহানবী (সা.) যখন ক্ষুধার্ত হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন

মহানবী (সা.) যখন ক্ষুধার্ত হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন
মহানবী (সা.) যখন ক্ষুধার্ত হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন

মিজানুর রহমান টনি: সুখ-দুঃখ, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা এগুলো নিয়েই জীবন। কখনো কখনো মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক সদস্যের জীবনেও এমন দিন চলে আসে, (বিশেষ করে যারা শহরে একা থাকে) দুপুরে খাওয়ার মতো টাকা পকেটে নেই। সহকর্মীদের কারো কাছেও হয়তো হঠাৎ টাকা-পয়সা পাওয়া যায়নি। লজ্জায় কারো সঙ্গে বিষয়টি শেয়ারও করা যাচ্ছে না।

তখন অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাদের হতাশা চেপে ধরে। অনেকে না বুঝে অনেক অকৃতজ্ঞতামূলক উক্তিও করে বসে, যা একদমই ঠিক নয়। সংকটও মানুষের জীবনের অংশ, আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-এর জীবনেও কখনো কখনো এ রকম অভাব এসেছে।
যিনি চাইলে ওহুদ পাহাড়ও তার জন্য স্বর্ণ বানিয়ে দেওয়া হতো।
ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা (রা.)। তিনি বলেন, একদিন মহানবী (সা.) এমন সময় ঘর থেকে বের হলেন, যে সময় সচরাচর তিনি ঘর থেকে বের হতেন না। যে সাধারণত কেউ সাক্ষাৎ করতেও আসত না।

এমন সময় আবু বকর (রা.) তাঁর কাছে এলেন। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, কী জন্য এসেছ হে আবু বকর! আবু বকর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে, তাঁর চেহারা দেখতে ও সালাম জানাতে এসেছি। কিছুক্ষণ পর ওমর (রা.) এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কী জন্য এসেছ ওমর? বলেন, ক্ষুধার তাড়নায় হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল বলেন, আমিও তা-ই অনুভব করছি।
অতঃপর তারা তিনজনই আবুল হায়সাম ইবনে তায়্যিহান আল আনসারির বাড়ি গেলেন।

তাঁর অনেক খেজুর বাগান, ফল বাগান ও ছাগলের পাল। কিন্তু কোনো খাদেম ছিল না। তারা তাঁর দেখা পেলেন না। ফলে তারা তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার স্বামী কোথায় গিয়েছেন? তিনি বলেন, আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই আবুল হায়সাম পানির পাত্র নিয়ে ফিরলেন। অতঃপর রাসুল (সা.)-কে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন এবং তাঁর পিতা-মাতাকে উৎসর্গ করতে থাকেন। তারপর তাদের নিয়ে বাগানে গেলেন এবং তাঁদের জন্য বিছানা বিছিয়ে দিলেন। খেজুর বাগান থেকে এক ছড়া খেজুর এনে দেন।
রাসুল (সা.) বলেন, আমাদের জন্য তাজা খেজুর বেছে আনলে না কেন? (পূর্ণ একটি ছড়া আনার কি প্রয়োজন ছিল)। আবুল হায়সাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমি চাই আপনি তা হতে কাঁচা ও পাকা খেজুর বেছে নিন। অতঃপর তারা সবাই খেজুর খেলেন এবং পানি পান করলেন। রাসুল (সা.) বলেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, এসবও সেসব নিয়ামতের মধ্যে গণ্য, কিয়ামতের দিন যেগুলোর হিসাব নেওয়া হবে। তা হলো, শীতল ছায়া, তরতাজা খেজুর ও ঠাণ্ডা পানি। অতঃপর আবুল হায়সাম তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য চলে গেলেন।

রাসুল (সা.) বলেন, আমাদের জন্য যেন দুগ্ধবতী ছাগী জবাই করা না হয়। অতঃপর তাদের জন্য একটি বাচ্চা ছাগল জবাই করা হলো এবং যথাশিগগির খাবার হাজির করা হলো এবং তাঁরা আহার করলেন। রাসুল (সা.) তাকে বলেন, তোমার কোনো খাদেম আছে কি? তিনি বলেন, না। রাসুল (সা.) বলেন, আমাদের যখন কোনো দাস আসবে, তখন আমাকে মনে করিয়ে দিয়ো। অতঃপর রাসুল (সা.)-এর কাছে দুজন দাস এলো। তাদের সঙ্গে তৃতীয় কেউ ছিল না। এমন সময় আবুল হায়সাম সেখানে উপস্থিত হলেন। রাসুল (সা.) তাকে বলেন, এ দুজনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নাও। বললেন, হে আল্লাহর নবী (সা.), আপনিই বেছে দিন। নবী (সা.) বললেন, পরামর্শদাতা বিশ্বস্ত হয়। অতএব তুমি একে নাও। কারণ আমি তাকে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর আমি তোমাকে তাঁর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য অসিয়ত করছি।

অতঃপর আবুল হায়সাম স্ত্রীর কাছে ফিরে গেলেন এবং তাকে রাসুল (সা.)-এর অসিয়তের কথা শোনালেন। তাঁর স্ত্রী বলেন, আপনার জন্য রাসুল (সা.)-এর কথা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা সম্ভব না-ও হতে পারে। অতএব আপনি দাস আজাদ করে দিন। তাতে আবুল হায়সাম দাসটি আজাদ করে দেন।

রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রত্যেক নবী ও খলিফার জন্য দুজন গোপন পরামর্শদাতা সৃষ্টি করে দেন। একজন সৎপরামর্শ দেয় এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখে। অন্যজন ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে ইতস্তত করে না। যে ব্যক্তিকে তাঁর মন্দ স্বভাব থেকে নিরাপদ রাখা হয়েছে, তাকে সব অন্যায় থেকে নিরাপদ রাখা হয়েছে। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৬)

মহান আল্লাহ সবাইকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে শোকর আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply